বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হলো ফুটবল। প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ ফুটবল খেলে, দেখে এবং এই খেলার মধ্যে নিজেদের খুঁজে পায়। আমার প্রিয় ফুটবল খেলোয়াড় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। আমি তাঁকে খুব পছন্দ করি, কারণ তিনি শুধু একজন বড়ো খেলোয়াড়ই নন, বরং একজন অনুপ্রেরণা। তাঁর জীবনকাহিনি শুনলেই বোঝা যায়, সাফল্য পেতে হলে কত কষ্ট করতে হয়।
ছোটবেলার দিনগুলো
রোনালদোর জন্ম ১৯৮৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি, পর্তুগালের ফুনচাল শহরে। তিনি খুব সাধারণ পরিবারে বড়ো হয়েছেন। তাঁর বাবার খুব বেশি টাকা ছিল না। তাই শৈশবে রোনালদো অনেক কষ্ট করেছেন। ছোটবেলায় তিনি বাবাকে বলেছিলেন, “আমাকে একটা ফুটবল কিনে দাও।” কিন্তু তাঁর বাবা নতুন বল কিনতে পারেননি। তাই তিনি নিজের হাতে একটা ফুটবল বানিয়েছিলেন—চামড়ার টুকরো জুড়ে তার ভেতরে কাগজ ভরে। ওই সাধারণ বল দিয়েই তিনি দিন-রাত খেলতে শুরু করেছিলেন।
মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই ফুটবল ম্যাচ দেখতে শুরু করেন তিনি। সেখান থেকেই ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। মাত্র সাত বছর বয়সে স্থানীয় ক্লাবে খেলতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তাঁর খেলার মান এতটাই ভালো হতে থাকে যে তিনি বুঝতে পারেন—ফুটবলই তাঁর জীবনের পথ।
পড়াশোনা ছেড়ে ফুটবলের পথে
রোনালদো যখন ১৪ বছর বয়সী, তখন তিনি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নেন। তিনি পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে পুরো সময় ফুটবল খেলার পেছনে দেন। কারণ তিনি জানতেন, একদিন তিনি বিশ্বের সেরা ফুটবলার হবেন। এই আত্মবিশ্বাসই তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে।
শারীরিক সমস্যার সঙ্গে লড়াই
ছোটবেলায় রোনালদোর একটি বড়ো সমস্যা ধরা পড়ে—ট্যাকিকার্ডিয়া। এটি একটি হৃদরোগ সমস্যা, যেখানে হৃদস্পন্দন খুব দ্রুত হয়ে যায়। ডাক্তাররা বলেছিলেন, ফুটবল খেলা তাঁর জীবনের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। কিন্তু রোনালদো হাল ছাড়েননি। তিনি অস্ত্রোপচার করান এবং সুস্থ হয়ে আবার মাঠে ফিরে আসেন। আজ সেই ছোট্ট ছেলে হয়ে উঠেছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়।

ক্যারিয়ার আর রেকর্ড
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে সবাই ভালোবেসে CR7 নামে চেনে। তিনি এখনও পর্যন্ত ৮২৭টিরও বেশি গোল করেছেন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাসের মতো বড়ো ক্লাবের হয়ে খেলেছেন তিনি। জাতীয় দলে পর্তুগালের হয়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন। তাঁর গতি, ফিটনেস, গোল করার ক্ষমতা তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে।
রোনালদোকে বলা হয় “ফিটনেস মেশিন”। কারণ তিনি এখনও প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করেন। তাঁর শরীরের ফিটনেস দেখে অনেক তরুণ খেলোয়াড় অনুপ্রাণিত হয়।
কেন তিনি আমার অনুপ্রেরণা?
আমি রোনালদোকে শুধু তাঁর খেলার জন্য পছন্দ করি না, বরং তাঁর লড়াইয়ের জন্যও। দারিদ্র্য, শারীরিক সমস্যা, নানা চ্যালেঞ্জ—কিছুই তাঁকে থামাতে পারেনি। তিনি দেখিয়েছেন—যদি মন থেকে কিছু চাই, তবে কঠোর পরিশ্রম করলে সবকিছু সম্ভব।
আমি নিজেও ফুটবল খেলা শুরু করেছি স্কুল লেভেলে। প্রথমে শুধু খেলাটা মজা মনে হতো, কিন্তু রোনালদোকে দেখে আমার স্বপ্ন তৈরি হয়েছে। আমি চাই একদিন বড়ো হয়ে আমিও বড়ো টুর্নামেন্টে খেলতে পারি। যখন রোনালদোকে মাঠে দেখি, তখন মনে হয়—”আমিও পারব!”
উপসংহার
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো শুধু একজন ফুটবলার নন, তিনি এক অনুপ্রেরণা। তাঁর জীবন আমাদের শেখায়—দারিদ্র্য, অসুস্থতা বা চ্যালেঞ্জ কোনো কিছুই স্বপ্নকে আটকে রাখতে পারে না। যদি ইচ্ছা থাকে, তবে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সবকিছু জয় করা সম্ভব। এজন্যই তিনি আমার প্রিয় খেলোয়াড় এবং আমার স্বপ্নের প্রেরণা।