ভারতের অন্যতম সেরা শ্যুটার মনু ভাকের। প্যারিস অলিম্পিক্সে একাধিক পদক জিতে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন তিনি। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ ক্রীড়া সম্মান—মেজর ধ্যানচাঁদ খেলরত্ন পুরস্কারের মনোনয়ন তালিকায় তাঁর নাম না থাকায় শুরু হয় প্রবল বিতর্ক। গোটা ক্রীড়াজগত প্রশ্ন তুলেছিল, দেশের হয়ে এক অলিম্পিক্সে একাধিক পদক জেতা প্রথম ভারতীয় অ্যাথলিট কেন বাদ পড়লেন? অবশেষে এই বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুললেন মনু ভাকের নিজে।
মনুর প্রতিক্রিয়া: সুর অনেকটাই নরম
নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে মনু লেখেন, “ঐতিহ্যবাহী খেলরত্ন পুরস্কারের জন্য আমার মনোনয়ন নিয়ে যা চলছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমি জানাতে চাই, খেলোয়াড় হিসাবে দেশের হয়ে পারফর্ম করাটাই আমার প্রথম দায়িত্ব। পুরস্কার আমাকে অনুপ্রাণিত করে, তবে সেটা আমার লক্ষ্য নয়। আমার মনে হচ্ছে, মনোনয়ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে হয়তো আমার তরফেই কোথাও ভুল হয়েছে, যেটা সংশোধনের চেষ্টা চলছে। তবে পুরস্কার পাই বা না পাই, দেশের হয়ে আরও পদক জেতাই আমার লক্ষ্য।”
তিনি আরও অনুরোধ করেন, এই বিষয় নিয়ে আর অযথা জলঘোলা না করতে। অর্থাৎ, প্রাথমিক ক্ষোভ বা হতাশার জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে এখন মনুর বক্তব্য অনেকটাই পরিণত ও নরম।
বিতর্কের সূত্রপাত
এই বিতর্কের শুরু কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রকের দাবির মধ্য দিয়ে। মন্ত্রক জানিয়েছিল, মনু ভাকের নাকি খেলরত্নের জন্য আবেদনই করেননি। সেই দাবি সঙ্গে সঙ্গে নস্যাৎ করেন মনুর বাবা রাম কিষণ ভাকের। তিনি জানান, তাঁদের পরিবার যথাযথভাবে আবেদন জমা করেছিল, কিন্তু কোনও উত্তর পাননি।
রাম কিষণ বলেন, “একই অলিম্পিক্সে দুটি পদক পাওয়ার কী লাভ যদি আপনাকে পুরস্কারের জন্য ভিক্ষা করতে হয়? একজন সরকারি অফিসার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, অথচ কমিটির সদস্যরা কোনও মতামত দিচ্ছেন না। এইভাবে দেশের ক্রীড়াবিদদের কীভাবে উৎসাহিত করবেন?” তাঁর কথায় ক্ষোভ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
পরিবারের হতাশা
মনুর বাবা আরও বলেন, “আমরা আবেদন করেছিলাম, কিন্তু কোনও জবাব আসেনি। কেন বাবা-মা তাদের সন্তানদের খেলাধুলোর জন্য উৎসাহিত করবেন? বরং তাঁদের উচিত সন্তানদের সরকারি চাকরির দিকে ঠেলে দেওয়া।” তাঁর বক্তব্য নিছক ক্ষোভ নয়, বরং ক্রীড়াব্যবস্থার ওপর এক প্রকার প্রশ্নচিহ্ন।
তবে মনুর সাম্প্রতিক পোস্টে বোঝা যাচ্ছে, তিনি এই বিতর্কে বেশি জড়াতে চাইছেন না। বরং দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন ও প্রতিশ্রুতিকেই তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

কেন এত আলোচনা?
মেজর ধ্যানচাঁদ খেলরত্ন ভারতের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া পুরস্কার। স্বাভাবিকভাবেই, যেকোনও আন্তর্জাতিক সাফল্যের পর অ্যাথলিটরা এর জন্য প্রত্যাশিত হন। মনুর ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও স্পষ্ট ছিল, কারণ তিনি অলিম্পিক্সে একাধিক পদক এনে নজির গড়েছিলেন। তাই মনোনয়ন তালিকায় তাঁর নাম না থাকা একেবারেই অস্বাভাবিক মনে হয়েছে অনেকের কাছে।
মনুর ভবিষ্যতের লক্ষ্য
পুরস্কার নিয়ে বিতর্কের মাঝেই মনু স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, তাঁর আসল লক্ষ্য দেশের হয়ে আরও পদক আনা। পুরস্কার অবশ্যই সম্মানের, কিন্তু সেটা পাওয়া বা না পাওয়া তাঁর খেলায় প্রভাব ফেলবে না। মনুর এই পরিণত দৃষ্টিভঙ্গি নিঃসন্দেহে ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে ইতিবাচক বার্তা।
উপসংহার
খেলরত্ন বিতর্কে মনু ভাকেরের বক্তব্য প্রমাণ করে দিল, তিনি শুধু মেধাবী শ্যুটারই নন, মানসিক দিক থেকেও যথেষ্ট পরিণত। পরিবারের ক্ষোভ থাকলেও, মনুর মূল ফোকাস খেলাতেই। পুরস্কার হোক বা না হোক, দেশের হয়ে সাফল্য আনার প্রতিশ্রুতি তিনি আবারও দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিলেন। সময়ই বলে দেবে, ভবিষ্যতে এই বিতর্ক মিটে তাঁকে প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হবে কি না। তবে আপাতত মনুর একটাই লক্ষ্য—আগামী দিনে ভারতের জন্য আরও গৌরব বয়ে আনা।