ভারত মানেই ক্রিকেট আর ক্রিকেট মানেই আবেগ। আধুনিক ভারতের সবচেয়ে বড়ো প্যাশন যদি কিছু থাকে, তবে সেটা নিঃসন্দেহে ক্রিকেট। এই দেশে একজন ক্রিকেটার হিসেবে নাম করতে পারা মানেই সাফল্যের শিখরে পৌঁছে যাওয়া। আজকের দিনে যিনি এই সংজ্ঞাটাকে একদম নিখুঁতভাবে প্রমাণ করেছেন, তিনি হলেন বিরাট কোহলি। ভারতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক, বর্তমানে সিনিয়র ব্যাটার—তার জনপ্রিয়তা শুধু ভারতে নয়, গোটা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়েছে।
কোহলির শুরু আর যাত্রা
২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা বিরাট কোহলি ধীরে ধীরে প্রমাণ করেছেন কেন তাকে “চেজ মাস্টার” বলা হয়। শুরুতে হয়তো একটু সময় লেগেছিল নিজেকে মানিয়ে নিতে, কিন্তু একবার সেট হয়ে গেলে তিনি হয়ে উঠেছেন প্রতিপক্ষের দুঃস্বপ্ন। তার ব্যাট থেকে রান যেন অবিরাম প্রবাহিত হতে থাকে। বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে কিংবা রান তাড়া করার সময় তিনি যেভাবে ব্যাট করেন, তা তাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে।
শচীন বনাম বিরাট: তুলনা নাকি প্রেরণা?
শচীন টেন্ডুলকার ভারতীয় ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তি। ক্রিকেট দুনিয়ার কাছে তিনি হলেন “লিটল মাস্টার”। বিরাট নিজেও স্বীকার করেছেন যে শচীনই তার অনুপ্রেরণা। তবুও সংখ্যার দিক থেকে দেখলে অনেক সময়েই তুলনা চলে আসে।
২৬ বছর বয়সে শচীনের ঝুলিতে ছিল ২৭টি সেঞ্চুরি, কোহলির ছিল ২১টি। তবে এখানে একটি বড়ো পার্থক্য চোখে পড়ে—শচীন প্রতি ৮ ম্যাচে একটি সেঞ্চুরি করতেন, আর কোহলি প্রায় প্রতি ৭ ম্যাচে একটি সেঞ্চুরি করেছেন। স্ট্রাইক রেটেও এগিয়ে ছিলেন কোহলি (শচীনের ৮৮.৯৬-এর তুলনায় কোহলির ৯০.৫০)। গড় রানেও তিনি এগিয়ে ছিলেন শচীনের থেকে।
অবশ্যই শচীনের দীর্ঘ ক্যারিয়ার, তার ধারাবাহিকতা আর ওপেনিংয়ে ব্যাট করার চ্যালেঞ্জ আলাদা করে সম্মানের দাবি রাখে। তবে কোহলির ব্যাটিং স্টাইল, ফিটনেস আর একাগ্রতা তাকে একেবারে নতুন মাত্রা দিয়েছে।

ব্যাটিং স্টাইল আর মানসিকতা
বিরাটের ব্যাটিংয়ে একটা আলাদা দৃঢ়তা আছে। তিনি শুধু টেকনিক্যালি শক্তিশালী নন, বরং তার মানসিকতা তাকে আলাদা করে দেয়। যেকোনো লক্ষ্যকে সামনে রেখে যেভাবে তিনি এগিয়ে যান, তাতে বোঝা যায় তিনি মাঠে নেমেই জয় ছিনিয়ে নিতে চান। তার আগ্রাসী দৃষ্টিভঙ্গি, প্রতিপক্ষের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার অভ্যাস তাকে আধুনিক যুগের সেরা ব্যাটারদের কাতারে এনে দিয়েছে।
অধিনায়কত্ব আর নেতৃত্ব
শুধু ব্যাটার হিসেবেই নয়, ভারতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবেও কোহলির ভূমিকা ভোলার নয়। তার নেতৃত্বে ভারত অনেক ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে, বিশেষত টেস্ট ক্রিকেটে। ফিটনেস কালচার নিয়ে দলের ভেতরে যে শৃঙ্খলা তিনি তৈরি করেছিলেন, সেটা আজও ভারতীয় ক্রিকেটে দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে।
ভবিষ্যতের রেকর্ড আর সম্ভাবনা
শচীন টেন্ডুলকারের ৪৯টি ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ডকে একসময় অপ্রতিরোধ্য মনে করা হতো। কিন্তু বিরাট কোহলির ধারাবাহিকতা সেই ধারণাটাকেই পাল্টে দিয়েছে। আজ তিনি এই রেকর্ডকে ছুঁয়েছেনও। প্রশ্ন হলো—কোহলি কি শচীনের চেয়েও এগিয়ে যাবেন? তার ফিটনেস, ব্যাটিং ফর্ম আর রানের ক্ষুধা দেখে মনে হয় এটাই সময়ের অপেক্ষা।
উপসংহার
ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে বিরাট কোহলি শুধুই একজন ক্রিকেটার নন, তিনি আধুনিক যুগের নায়ক। তার ব্যাটিং, তার আগ্রাসী মনোভাব, তার ফিটনেস আর সর্বোপরি তার জয়ের তৃষ্ণা তাকে বিশেষ করে তুলেছে। হয়তো আগামী দিনের ক্রিকেটে আমরা বিরাটকেই সর্বাধিক সেঞ্চুরির মালিক হিসেবে দেখব। তবে সংখ্যার বাইরে গিয়ে বলা যায়—বিরাট কোহলি ভারতীয় ক্রিকেটের এক অমূল্য সম্পদ, যিনি ক্রিকেটের ইতিহাসে চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন।