ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ মানেই এক ভিন্ন মাত্রার উত্তেজনা, যেখানে কোটি কোটি দর্শক শুধু খেলাই নয়, আবেগ, গর্ব আর প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রতিফলন দেখতে চায়। তবে আশ্চর্যের বিষয়, এবারের টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপ ২০২৫-এ দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগে টিকিট বিক্রির গতি একেবারেই মন্থর, যা ক্রিকেটপ্রেমীদের বিস্মিত করছে। অতীতের তুলনায় এই চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন, কারণ ২০২৪ সালের জুনে যখন নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এই দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল, তখন ৩৪ হাজার দর্শকের আসন প্রায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল, পতাকার রঙিন ঢেউ, ঢোলের শব্দ আর ভক্তদের উচ্ছ্বাসে আমেরিকার মাটিতেও যেন উপমহাদেশের আবহ তৈরি হয়েছিল। এমনকি ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুবাইয়েই অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও টিকিট লঞ্চ হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সব শেষ হয়ে গিয়েছিল, আর বিরাট কোহলির এক অসাধারণ সেঞ্চুরিতে সেই ম্যাচ চিরস্মরণীয় হয়ে ওঠে। কিন্তু এবার একই মাটিতে ভারত-পাক ম্যাচকে ঘিরে সেই উন্মাদনা অনুপস্থিত, এবং টিকিট বিক্রিতে বড় ধস নেমেছে। এই পরিস্থিতির পেছনে একাধিক কারণ সামনে এসেছে। প্রথমত, প্রিমিয়াম আসনের টিকিটের দাম একেবারেই নাগালের বাইরে, যেখানে সাধারণ দর্শকের জন্য ৫০ থেকে ১৫০ দিরহামের টিকিট মুহূর্তেই শেষ হলেও ৭৫০ থেকে ৯০০ দিরহাম দামের টিকিট অবিক্রিত রয়ে গেছে, আর গ্র্যান্ড লাউঞ্জ হসপিটালিটি পাসের দাম প্রায় ৮৪ হাজার টাকা হওয়ায় তা একেবারেই সাধারণ ভক্তদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। দ্বিতীয়ত, প্রচণ্ড গরম আবহাওয়া দর্শকদের নিরুৎসাহিত করছে, কারণ রাতের বেলাতেও তাপমাত্রা থাকে ৩৪ ডিগ্রির উপরে আর দিনে ৩৮ ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যা মাঠে বসে পুরো ম্যাচ উপভোগ করা কঠিন করে তুলছে। তৃতীয়ত, ভারতের দুই সুপারস্টার বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার অবসরও দর্শক টানার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ তাদের উপস্থিতিই সাধারণত ম্যাচকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেত। চতুর্থত, পাকিস্তান গত তিন সপ্তাহ ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে খেলছে এবং আফগানিস্তান ও ইউএই’র বিপক্ষে সিরিজে দর্শকের উপস্থিতি খুব একটা দেখা যায়নি, যা স্থানীয়দের আগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে।

যদিও সাধারণ আসনের টিকিট ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে এবং ভারতীয় সমর্থকদের উপস্থিতি নিশ্চিত, তবে প্রিমিয়াম সিট ফাঁকা থেকে যাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ভারতীয় সমর্থকরা সাধারণত স্টেডিয়ামে রঙ, উৎসব আর প্রাণচাঞ্চল্য নিয়ে আসে, কিন্তু এবার সেই পরিবেশ কিছুটা কম হতে পারে। তবে টিকিট বিক্রির এই মন্দা মাঠের খেলায় কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেই বিশ্বাস করা হচ্ছে, কারণ ভারত-পাক ম্যাচ মানেই অঘটন, উত্তেজনা আর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রুদ্ধশ্বাস প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ভারতের ব্যাটিং লাইনআপে সূর্যকুমার যাদব ও অভিষেক শর্মার মতো তারকারা আছেন, অন্যদিকে পাকিস্তানও সাম্প্রতিক সাফল্যের ওপর ভর করে নামবে। ক্রিকেটপ্রেমীদের আশা, গ্যালারি হয়তো এবার আগের মতো ভরে উঠবে না, কিন্তু মাঠের প্রতিটি বলেই তৈরি হবে উত্তেজনা আর সেই পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহ, যা ভারত-পাক ম্যাচকে সবসময় বিশেষ করে তোলে। তাই বলা যায়, টিকিট বিক্রিতে ভাটা পড়লেও, টিভি স্ক্রিনে কোটি কোটি দর্শকের চোখ থাকবে এই মহারণের দিকেই, আর ক্রিকেটই শেষ পর্যন্ত জয়ী হবে।