২০৩২ অলিম্পিক্সেও কি ক্রিকেট? ব্রিসবেনে বৈঠক করলেন আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ

ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এক দারুণ খবর। লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক্সে (2028) ক্রিকেটের অন্তর্ভুক্তি ইতিমধ্যেই নিশ্চিত হয়েছে। এবার কি ২০৩২ সালে ব্রিসবেন অলিম্পিক্সেও দেখা যাবে ক্রিকেট? সেই সম্ভাবনা নিয়েই সরগরম ক্রীড়াজগৎ। বৃহস্পতিবার এই ইস্যুতে ব্রিসবেন অলিম্পিক্স আয়োজক কমিটির কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন আইসিসির নতুন চেয়ারম্যান জয় শাহ।

ক্রিকেটের অলিম্পিক্সে প্রত্যাবর্তন

অলিম্পিক্স ইতিহাসে ক্রিকেট খুব একটা নিয়মিত নয়। শেষবার ক্রিকেটকে অলিম্পিক্স মঞ্চে দেখা গিয়েছিল ১৯০০ সালে প্যারিস গেমসে, সেটাও একেবারে প্রদর্শনী ম্যাচের মতো ছিল। তারপর দীর্ঘ ১২৮ বছর পর ক্রিকেট ফিরছে ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক্সে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সেখানে অনুষ্ঠিত হবে পুরুষ ও মহিলাদের টি-২০ ফর্ম্যাটের ম্যাচ।

আইসিসি আশা করছে, এর ফলে ক্রিকেট নতুন বাজারে পৌঁছে যাবে এবং যেসব দেশে ক্রিকেট এখনও ততটা জনপ্রিয় নয়, তারাও খেলাটির সঙ্গে পরিচিত হবে। বিশেষত আমেরিকার মতো দেশে ক্রিকেটের বাজার তৈরি হলে বিশ্বজুড়ে এর জনপ্রিয়তা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।

ব্রিসবেন অলিম্পিক্সের সম্ভাবনা

২০২৮-এর পরেই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি ২০৩২ সালের ব্রিসবেন অলিম্পিক্সেও ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত থাকবে? যদিও এখনও অফিসিয়ালি কিছু নিশ্চিত হয়নি, তবে জয় শাহ ইতিমধ্যেই এ নিয়ে তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। ব্রিসবেনে তাই ক্রিকেট অন্তর্ভুক্তির দাবি আরও জোরালো।

বৈঠকে জয় শাহের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ব্রিসবেন অলিম্পিক্স কমিটির প্রধান সিন্ডি হুক এবং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সিইও নিক হকলি। সূত্রের খবর, আলোচনায় ক্রিকেট অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা হয়েছে।

জয় শাহের নতুন দায়িত্ব ও লক্ষ্য

বিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সচিব জয় শাহ এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। গত অগাস্টে নিউজিল্যান্ডের জর্জ বার্কলে চেয়ারম্যান পদ ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই জয় শাহর নামই সবচেয়ে জোরালোভাবে শোনা যাচ্ছিল। আর মনোনয়ন জমা পড়েনি অন্য কারও। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থার সর্বোচ্চ পদে আসীন হন।

দায়িত্ব নেওয়ার পরই জয় শাহ ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর মূল লক্ষ্য হবে ক্রিকেটের বিশ্বজনীন জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করা। তিনি বলেন, “আমাদের প্রধান লক্ষ্য হল ক্রিকেটকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক্সে ক্রিকেটের অন্তর্ভুক্তি সেই যাত্রার প্রথম ধাপ মাত্র। এর ফলে ক্রিকেট নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে।”

ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

জয় শাহর নেতৃত্বে আইসিসি এখন চাইছে ক্রিকেটকে শুধুমাত্র ঐতিহ্যবাহী দেশগুলোতেই সীমাবদ্ধ না রেখে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিতে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, আফ্রিকার কিছু দেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করার পরিকল্পনা রয়েছে। অলিম্পিক্সে ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত হওয়া সেই মিশনেরই অংশ।

ব্রিসবেন অলিম্পিক্স যদি ক্রিকেটকে জায়গা দেয়, তবে সেটা নিঃসন্দেহে আরও বড় মাইলফলক হবে। কারণ অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি। অলিম্পিক্সের মঞ্চে ক্রিকেট হলে বিশ্বজুড়ে এর মর্যাদা আরও বাড়বে।

উপসংহার

লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক্সে ক্রিকেট ফিরছে—এটা তো নিশ্চিত। এখন নজর ২০৩২ ব্রিসবেনের দিকে। জয় শাহের উদ্যোগ ও আইসিসির পরিকল্পনা দেখে মনে হচ্ছে, ক্রিকেটকে এবার সত্যিই বিশ্বজনীন খেলা বানানোর মিশন শুরু হয়েছে। যদি ব্রিসবেনেও ক্রিকেট জায়গা করে নেয়, তবে সেটা শুধু ক্রিকেটের জন্য নয়, গোটা ক্রীড়াজগতের জন্যই এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *