নয়াদিল্লি, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫: ভারতীয় ফুটবল দলের বিদেশের মাটিতে অর্জিত সাফল্য ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যুক্ত করেছে। সম্প্রতি তাজিকিস্তানে ভারতীয় দল এমন একটি সাফল্য পেয়েছে, যা অনেক বছর পর এসেছে। ফিফা র্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকা দুই দলকে হারিয়ে ভারত টুর্নামেন্টে আট দলের মধ্যে তৃতীয় সেরা দলের খেতাব জিতেছে।
১৯৬২-৬৪: ভারতীয় ফুটবলের স্বর্ণযুগ
ভারতীয় ফুটবল দল বিদেশের মাটিতে সবচেয়ে বড় সাফল্য পেয়েছিল ১৯৬২ সালের এশিয়ান গেমসে। সেবার জাকার্তায় ফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়াকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো স্বর্ণ জিতেছিল ভারত। এরপর ১৯৬৪ সালে ফের দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে জয় পেয়েছিল ভারত। এএফসি এশিয়ান কাপের গ্রুপ পর্বেও কোরিয়াকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে স্মরণীয় মুহূর্ত সৃষ্টি হয়।
হংকংয়ের বিপক্ষে ৩-১ ব্যবধানে হার সত্ত্বেও ভারত গ্রুপে রানার্স-আপ হয়েছিল। এই সময়কালকে ভারতীয় ফুটবলের সেরা পারফরম্যান্স হিসেবে মনে করা হয়।
২০শ শতাব্দীর অন্যান্য সাফল্য
ভারতীয় দল ১৯৫১ সালের এশিয়ান গেমস থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে সাফল্য অর্জন করেছে। উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জন:
- ২০০৮ এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ: চ্যাম্পিয়ন
- ১৯৭০ এশিয়ান গেমস: ব্রোঞ্জ
- ১৯৫৯, ১৯৬৪ মারডেকা কাপ: রানার্স-আপ
- ২০১৯ কিংস কাপ: তৃতীয় স্থান
এই অর্জনগুলো ভারতীয় ফুটবলের ঐতিহ্য এবং প্রতিযোগিতার শক্তি তুলে ধরে।
সাম্প্রতিক সাফল্য: তাজিকিস্তানে ঐতিহাসিক জয়
ওমানের বিরুদ্ধে ভারত আগে কখনও জয় পায়নি। তবে, সম্প্রতি ওমানের সঙ্গে খেলা সাতটি ম্যাচের মধ্যে ভারতের দল সাতটিতে জয় এবং তিনটিতে ড্র করেছে। দুই দলের শেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল ২০২১ সালের মার্চে, যেখানে ১-১ ড্র হয়। প্রায় সাড়ে চার বছর পর ভারতের দল ওমানের বিরুদ্ধে প্রথম জয় অর্জন করেছে।
এই জয় ভারতীয় ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। তবে আসল পরীক্ষা এখনও বাকি। আগামী মাসে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে ভারতকে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

আগাম ম্যাচ এবং প্রস্তুতি
আগামী অক্টোবর মাসে ভারত দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলবে সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে।
- প্রথম ম্যাচ: ৯ অক্টোবর, সিঙ্গাপুর
- দ্বিতীয় ম্যাচ: ১৪ অক্টোবর, গোয়া
এরপর, ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশ এবং ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ হংকংয়ের সঙ্গে বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচ।
ভারতের সফলতা তাজিকিস্তানে তাদের প্রস্তুতি এবং আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। কোচ খালিদ জামিল দলের নেতৃত্বে নিশ্চিতভাবে তাদের ফিটনেস, কৌশল ও মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। গ্রুপ ‘সি’-তে প্রথম দুটি ম্যাচে বাংলাদেশ ও হংকংয়ের বিরুদ্ধে এক ড্র এবং এক হারের ফলে ভারত সর্বশেষ স্থানে রয়েছে।
শেষ কথা
ভারতের ফুটবলের ইতিহাস বিদেশের মাটিতে গর্বের। ১৯৬২ থেকে শুরু হওয়া স্বর্ণযুগ থেকে আজ পর্যন্ত ভারতীয় ফুটবল দলের অর্জন অনুপ্রেরণামূলক। তাজিকিস্তানে সম্প্রতি অর্জিত সাফল্য দলকে পরবর্তী ম্যাচের জন্য উচ্চ আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক শক্তি প্রদান করেছে। আগামী চ্যালেঞ্জগুলো ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে এবং খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক মানে প্রমাণ করার সুযোগ দেবে।